পঞ্চগড় জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অবস্থিত। পঞ্চগড় "জেলা" হিসেবে নবগঠিত ও আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এর পারিপার্শ্বিক ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে স্যার সিরিল রেডক্লিফ কর্তৃক নির্দেশিত এই জেলার সীমান্ত রেখা অত্যন্ত আঁকাবাঁকা ও ভঙ্গুর। পঞ্চগড় জেলার তিনদিকেই ভারতীয় সীমান্ত। জেলার প্রায় ১৮০মাইল বা ২৮৮কিঃমিঃ এলাকাইয় সীমানা বেষ্টনি দিয়ে রেখেছে ভারত।
প্রাচীন ও মধ্য যুগে এই ভূখণ্ডের পাশেই ছিল মগধ, মিথিলা, গৌর, নেপাল, ভুটান, সিকিম ও আসাম রাজ্যের সীমান্ত। পঞ্চগড় জেলা বর্তমানে যে রকম একটি সীমান্ত অঞ্চল অতীতেও এইরকম ছিল। এই ভূখণ্ডটি পর্যায়ক্রমে শাসিত হয়েছে প্রাগ-জ্যোতিষ, কামরূপ, কামতা, কুচ বিহার ও গৌর রাজ্যের রাজা, বাদশা, সুবাদার এবং বৈকুন্ঠপুর অঙ্গ রাজ্যের দেশীয় রাজা ও ভূস্বামীদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। খ্রিস্টীয় ২য়, ৩য় শতকের মধ্যে রাজা শালিবাহন, রাজা পৃথু এবং রাজা জল্লেশ পঞ্চগড়ের শালবাহান ও ভিতরগড় এলাকায় রাজ্য ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন। মৌর্য, গুপ্ত ও পাল রাজারাও এই অঞ্চল শাসন করেছিলেন।
আয়তন, অবস্থান ও জনসংখ্যা:
জেলার মোট আয়তন ১,৪০৪.৬৩ কিঃমিঃ বা ৫৪২.৩৩ বর্গমাইল। এর অবস্থান: ২৬°০০´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৯´ থেকে ৮৮°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। জনসংখ্যা: ৮৩৬১৯৬; পুরুষ ৪২৯৪৯০, মহিলা ৪০৬৭০৬। মুসলিম ৬৯০৮৯৩, হিন্দু ১৪২৩৫০, বৌদ্ধ ২১৯৪, খ্রিস্টান ৪২ এবং অন্যান্য ৭১৭।
প্রতিষ্ঠা:
পঞ্চগড় ছিল ব্রিটিশ শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি থানা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় এটি দিনাজপুর জেলাভুক্ত হয়। ১৯৮০ সালে পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া থানা সমন্বয়ে পঞ্চগড় মহকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়।
নামকরণ:
বহু আর্বতন ও বিবর্তনের মধ্যদিয়ে পঞ্চগড় জেলার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। পঞ্চগড় নামকরনেও রয়েছে এক ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। পঞ্চগড় নামকরণ সমন্ধে কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে, এ অঞ্চলটি অতি প্রাচীনকালে ‘পুন্ডুনগর রাজ্যের অর্ন্তগত ‘পঞ্চনগরী’ নামে একটি অঞ্চল ছিল। কালক্রমে পঞ্চনগরী ‘পঞ্চগড়’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। ‘পঞ্চ’ (পাঁচ) গড়ের সমাহার ‘পঞ্চগড়’ নামটির অপভ্রাংশ ‘পঞ্চগড়’ দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলের নাম যে, পঞ্চগড়ই ছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। বস্ত্ততঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ‘পঞ্চ’ শব্দটি বিভিন্ন স্থানের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটি, পঞ্চনগরী পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। সুতরাং পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হিসেবে প্রাকৃত ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পঞ্চগড়ের নামকরনের সম্ভাবনা থকে যায়। অর্থ্যাৎ পঞ্চগৌড় > পঞ্চগোড়>পঞ্চগড়। অবশ্য বহুল প্রচলিত বিষয় মতে এই অঞ্চলের পাঁচটি গড়ের সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণেই পঞ্চগড় নামটির উৎপত্তি। গড়গুলো হল- ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড়, দেবনগড়।
আবার কিছুটা ভিন্ন মতে ‘পঞ্চ’ শব্দের অর্থ 'পাঁচ', আর ‘গড়’ শব্দের অর্থ 'বন বা জঙ্গল'। সেই সূত্র মতে পাঁচটি গড়ের সমষ্টি হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে পঞ্চগড়। এটা বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্যি যে, দেশ ভাগ হবার আগ পর্যন্তও এই অঞ্চলটি ছিল জনমানুষ বিরল একটি বড় বন-জঙ্গল পূর্ণ এলাকা। সে জঙ্গলে বন্য হাতী, অসংখ্যা প্রাজাতির পাখিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রানীর বাঘ পর্যন্ত ছিল।তবে মানুষের সংখ্যা বারার সাথে সাথে পরিবর্তনও এসেছে অনেক দ্রুত। এখণকার দিনে ওই ধরনের বন্যভুমি দেখতে পাওয়া একেবারেই বাহুল্য বলা যায়।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া।
পঞ্চগড় জেলার পরিচিতি ও নামকরণ
Reviewed by admin
on
মার্চ ২৬, ২০১৮
Rating:

কোন মন্তব্য নেই: